দুর্নীতির দুই মামলায় অভিযোগ গঠনকারী নিম্ন আদালতের বিচারকের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি রেজা-উল হকের একক বেঞ্চ বিএনপি চেয়ারপারসনের রিট্ আবেদন খারিজের এই আদেশ দেয়।বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চে বিভক্ত আদেশের পর এই বেঞ্চে আবেদনটি এসেছিল।
ঢাকার বিশেষ জজ-৩ বাসুদেব রায় গত ১৯ মার্চ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপস্থিতিতে ‘জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট’ ও ‘জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট’ দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠন করেন।
ওই অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে এসে বিফল হওয়ার পর গত ১২ মে বিচারকের নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আবেদন করেন খালেদা।
শুনানিতে খালেদার পক্ষে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী বলেছিলেন, বিশেষ জজ আদালতে বিচার করতে হলে গেজেটের মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ দিতে হয়। বাসুদেব রায়ের ক্ষেত্রে তার ব্যত্যয় ঘটেছে।
“এ কারণে তার নিয়োগ অবৈধ। তার গৃহীত কার্যক্রমও বৈধ নয়।”
অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, বাসুদেব রায়কে অফিসিয়াল গেজেটের মাধ্যমেই নিয়োগ দেয়া হয়। বিজি প্রেসের বাংলাদেশ গেজেটে তা পরে প্রকাশিত হয়েছে।
“আইনের বাধ্যবাধকতা অফিসিয়াল গেজেটের বিষয়ে। গেজেট প্রকাশের বিষয়ে নয়।”
বিচারকের নিয়োগের বৈধতা তুলে করা আবেদন খারিজের ফলে নিম্ন আদালতে মামলা দুটির শুনানি চলতে আর কোনো বাধা নেই বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন।
বৃহস্পতিবার বাসুদেব রায়ের আদালতে এই মামলা দুটির সাক্ষ্যগ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু হাই কোর্টের আবেদন থাকার কথা খালেদার আইনজীবীরা জানালে শুনানি পিছিয়ে ৯ জুলাই নতুন তারিখ ঠিক করে দেন তিনি।
পুরান ঢাকার বকশীবাজার এলাকায় আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আদালতের বিশেষ এজলাস বসিয়ে এই দুই মামলার বিচার চলছে।
বিএনপি নেতারা শুরু থেকেই বলে আসছেন, এই মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এজলাস স্থানান্তরের বিরোধিতাও করে আসছেন তারা।
জিয়া অরফ্যানেজ (এতিমখানা) ট্রাস্ট মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে খালেদা ও তার ছেলে তারেকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে। আর জিয়া চ্যারিটেবল (দাতব্য) ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আসামি হিসাবে রয়েছেন আরো তিনজন।
এতিমখানা ট্রাস্ট মামলার অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপির সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং প্রয়াত জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
এদের মধ্যে সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আছেন জামিনে। তারেক উচ্চ আদালতের জামিনে গত পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন। বর্তমানে তিনিসহ বাকি দুজন পলাতক।
দাতব্য ট্রাস্ট মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।
এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে। খালেদাসহ বাকি দুই আসামি জামিনে রয়েছেন।
২০১১ সালের ৮ অগাস্ট জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হয়।
তেজগাঁও থানার এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে।
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে। ২০১০ সালের ৫ অগাস্ট এই মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়।
এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়।